বাংলা কবিতাকে বিশ্বের কাছে প্রথম পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ তার গীতাঞ্জলি কাব্যের নোবেল প্রাপ্তির মধ্য দিয়ে। সেটা প্রায় ১০০ বছর আগে, ১৯১৩ সালে। রবীন্দ্রনাথ যদিও তার কবিতায় প্রেম-ভালোবাসার কথা নিয়ে এসেছেন তবে তা খুব কমই নর-নারীর প্রেম নিয়ে লেখা- বরংচ তাতে ঐশ্বরীক প্রেমের প্রাধান্যই বেশি ছিলো। তাঁর সময়কাল থেকে পঞ্চাশ অব্দি কবিরা ছিলেন রবীন্দ্র আবেশে আবেশিত। সেই ঘোরটা এসে এক ধাক্কায় ভেঙে দিলেন জীবনান্দ দাশ। এলো কবিতার নিকষ দ্যুতি।
বিশেষত জীবনানন্দ এসেছিলেন একটি নোডাল পয়েন্টে ; বাংলা কবিতায় যে একটা ভারি-রকম উলট-পলট ঘটতে চলেছে - তার পাতবিন্দুতে ৷ মৃত্যুর পরে নয়, এমনকী, তার আগেই জীবনানন্দকে চিহ্নিত করা হয়েছিল এইবলে যে, "আধুনিক বাংলা কাব্যে জীবনানন্দের দানই সবচেয়ে অসাধারণ ও কৌতুহলোদ্দীপক।” কী আশ্চর্য, একজন পরাস্ত পুরুষের নির্বাপিত নিষ্প্রাণ ও নিস্তেজ জ্বালা, বিরহ তথা একাকীত্ব ও নভাক যামিনীর প্রতি মর্মান্তিক স্যারেন্ডার থেকে নতুন ফুয়েল পেয়েছে নির্বাপিতপ্রায় বাংলা কবিতার দীপশিখা। এ ভারি অদ্ভুত, বড়ই শ্রদ্ধার। হিমশীতল অবসাদ আর তুষাগ্নি বিষাদ থেকে জীবনের নতুন ফিটাস।
জীবনান্দের হাত ধরে পঞ্চাশে বাংলা কবিতায় লেগেছে হালকা চালের রোমান্টিক সুর। জীবনানন্দ বাদে অচিন্তাকুমার, শামসুর রাহমান, বিরাম মুখোপাধ্যায়, গোবিন্দ চক্রবর্তী, দিনেশ দাশের হাতে সুদিন ফিরে আসছে বাংলা কবিতার। যুদ্ধ-দাঙ্গা-দেশভাগ-রিফিউজির সমস্যা কাটিয়ে কবিতার স্বাস্থ্যে আসে নতুন দ্যুতি।
এই নতুন “ধারা” আজ অব্দি চলে আসছে, কিন্তু নতুন একটা “অধ্যায়” গড়ে তুলতে পারেনি একবিংশ শতাব্দীর কবিতাচর্চা। যেখানে শব্দ দিয়ে কবিতা তৈরি হয়, তাই নতুন চেতনার জন্য নতুন শব্দেরও প্রয়োজন পুরানো শব্দের অপরীক্ষিত ব্যঞ্জনা দিয়েও নতুন কিছু তৈরি করা যায়, কবি বারীন ঘোষাল যাকে বলেছেন শব্দের অসম্ভব ব্যবহার; - কবি যখন প্রচলিত রীতি, ছন্দ-প্রকরণ এবং শব্দ শরব্যতায় শৃঙ্খলিত বোধ করেন, তখনই নতুনের জন্য এই যাচনা জন্মায়, নতুন কবিতার জন্ম হয়।
সাম্প্রতিক সিংহভাগ কবিদের লেখাপত্রে এই 'নতুন'-এর খাস নমুনা নেই। এঁদের কারণেই এখন বাংলা কবিতার পাঠক আরও কমে গিয়েছে। কখনো সামান্য সৃক্ষনভার, কখনো একেবারেই গভীরতাহীন “স্মার্টনেস” সহ, দোষের দায়ভারটা অযথা লেপটে যাচ্ছে বর্তমানের সমস্ত কবির সঙ্গে।
তবুও প্রয়াস থেমে যায়না। কবিরা কবিতা লেখেন মনের খোরাকে. অথবা পাঠকের খোরাক মেটাতে। তেমনি কিছু প্রেম-ভালোবাসার কবিতা দেয়া হলো এখানে..আপনিই এগুলোর সার্থকতা যাচাই করুন নাহয়।
বিশেষত জীবনানন্দ এসেছিলেন একটি নোডাল পয়েন্টে ; বাংলা কবিতায় যে একটা ভারি-রকম উলট-পলট ঘটতে চলেছে - তার পাতবিন্দুতে ৷ মৃত্যুর পরে নয়, এমনকী, তার আগেই জীবনানন্দকে চিহ্নিত করা হয়েছিল এইবলে যে, "আধুনিক বাংলা কাব্যে জীবনানন্দের দানই সবচেয়ে অসাধারণ ও কৌতুহলোদ্দীপক।” কী আশ্চর্য, একজন পরাস্ত পুরুষের নির্বাপিত নিষ্প্রাণ ও নিস্তেজ জ্বালা, বিরহ তথা একাকীত্ব ও নভাক যামিনীর প্রতি মর্মান্তিক স্যারেন্ডার থেকে নতুন ফুয়েল পেয়েছে নির্বাপিতপ্রায় বাংলা কবিতার দীপশিখা। এ ভারি অদ্ভুত, বড়ই শ্রদ্ধার। হিমশীতল অবসাদ আর তুষাগ্নি বিষাদ থেকে জীবনের নতুন ফিটাস।
জীবনান্দের হাত ধরে পঞ্চাশে বাংলা কবিতায় লেগেছে হালকা চালের রোমান্টিক সুর। জীবনানন্দ বাদে অচিন্তাকুমার, শামসুর রাহমান, বিরাম মুখোপাধ্যায়, গোবিন্দ চক্রবর্তী, দিনেশ দাশের হাতে সুদিন ফিরে আসছে বাংলা কবিতার। যুদ্ধ-দাঙ্গা-দেশভাগ-রিফিউজির সমস্যা কাটিয়ে কবিতার স্বাস্থ্যে আসে নতুন দ্যুতি।
এই নতুন “ধারা” আজ অব্দি চলে আসছে, কিন্তু নতুন একটা “অধ্যায়” গড়ে তুলতে পারেনি একবিংশ শতাব্দীর কবিতাচর্চা। যেখানে শব্দ দিয়ে কবিতা তৈরি হয়, তাই নতুন চেতনার জন্য নতুন শব্দেরও প্রয়োজন পুরানো শব্দের অপরীক্ষিত ব্যঞ্জনা দিয়েও নতুন কিছু তৈরি করা যায়, কবি বারীন ঘোষাল যাকে বলেছেন শব্দের অসম্ভব ব্যবহার; - কবি যখন প্রচলিত রীতি, ছন্দ-প্রকরণ এবং শব্দ শরব্যতায় শৃঙ্খলিত বোধ করেন, তখনই নতুনের জন্য এই যাচনা জন্মায়, নতুন কবিতার জন্ম হয়।
সাম্প্রতিক সিংহভাগ কবিদের লেখাপত্রে এই 'নতুন'-এর খাস নমুনা নেই। এঁদের কারণেই এখন বাংলা কবিতার পাঠক আরও কমে গিয়েছে। কখনো সামান্য সৃক্ষনভার, কখনো একেবারেই গভীরতাহীন “স্মার্টনেস” সহ, দোষের দায়ভারটা অযথা লেপটে যাচ্ছে বর্তমানের সমস্ত কবির সঙ্গে।
তবুও প্রয়াস থেমে যায়না। কবিরা কবিতা লেখেন মনের খোরাকে. অথবা পাঠকের খোরাক মেটাতে। তেমনি কিছু প্রেম-ভালোবাসার কবিতা দেয়া হলো এখানে..আপনিই এগুলোর সার্থকতা যাচাই করুন নাহয়।
অলৌকিক ভালোবাসা
সবুজ মাঠের ঐ পাশে স্বর্নালী হাওয়ায়-সন্ধ্যায়
আকাশ-নীল শাড়ী উড়ছে হাওয়ায়-সন্ধ্যায়
এ কোন্ এলোকেশী স্বপ্নের হাত ছুঁয়ে ছুঁয়ে
আমার চৈতন্যে হৃদয়ে ছোঁয়ালো!
আমার বুকের কষ্ট হঠাৎ কেঁদে উঠল
বৈরি হাওয়ায় ছিটকে পড়লাম আমি
চোখ মেলে দেখি মাঠ নেই
স্বর্ণালী হাওয়া নেই
সন্ধ্যা নেই!
আমার বুকের ভিতর গোপন ঝড় তুলে
নীল শাড়ি-এলোকেশী কৈ?
গভীর স্বপ্নের রাত আমার অলৌকিক ভালোবাসা।
উদ্ধার- পুনরুদ্ধার
এইখানে বাতাস মনকে প্রলুব্ধ করে ভালোবাসতে
এইখানে রাত্তির ব্যথার নীল ব্যর্থতায় কাঁদে
আমাদের দুর্দান্ত মোহ বীণার ঝংকারে অলঙকৃত হয়
রূপালি চাঁদ ভেসে বেড়ায় খোলা আকাশে হাওয়ায়!
মু দ্রি ত প্রে ম
তোমার হয়েছে কী! ছেপে আছে তোমার
চোখে বিষন্নতা
গতকালও তোমাকে বেশ লেগেছিল
কিঙবা কিছুক্ষণ আগে;
তোমার বিকেলে আলতো চুলে জীবনানন্দ ঘুরে মেঠোপথে
দ্যাখো আকাশে আজ পঞ্চমী চাঁদ
খুঁজে নিয়ো আমাকে, আমার চোখে
তুমি কেবলি চিত্রল হরিণ; আমি শস্যসন্ন্যাস।
দিন কাহন
কুয়াশাচ্ছন্ন আকাশে অরুণের অভ্যুদয়
নিলর্জ্জ তেজষ্ক্রিয়তা আর ইটভাঙা প্রখরতায়
ক্লান্ত আমি।
দিন পেরোলেইতো রাত-বিরাতের খেলা
ক্লান্ত হাতে সুই ফুঁড়ে যাই
বলি মনের কথা একান্তে।
আমার শ্রান্ত চোখে দেখা শ্যাষ রোদ্দুর
হাতপাখার এই নড়াচড়া আমার চোখের পানি
সাথে মেশে। স্বপ্নরা আসে ভেসে
অচিন দেশে।সুর তুলে যায় তীব্র হিরন্ময়তায়
খাঁচার ভিতর অচিন পাখি ...
লগ্ন শ্যাষ, থেমে যায় সোনালী রোদ্দুর দীর্ঘশ্বাস।
প্রহরগুলো সব এগিয়ে চলে ধীরে
নিতে হবে সন্ধ্যের রঙিন সাজ
কাজলমাখা চোখে আমার
প্রেম যত বন্দী-সব কাপড়ে ঢাকা।
লনের ওপর সবুজ ঘাস, আসছে কারও পায়ের আওয়াজ
দুমড়ে ফেলে আমাদের অগভীর শেকড়।
আমাদের রক্তরন্ধ্রের ভেতর বেজে ওঠে সাইরেন, শব্দের প্রতিধ্বনি
-থামো, আমরাও মানুষ ...
রাত্রি শ্যাষ, সোডিয়াম লাইটে নিস্তব্ধ অন্ধকার
ক্লান্ত মন, ক্লান্ত দেহ
চুড়ি ভাঙে, লেপ্টে থাকে কাজল
উদাস মনে তাকিয়ে থাকি আমাকেই, আয়নার ভেতর
আমি মরে চলি, মরে চলি, মরে চলি।
নীল মনিহার
আমি সেদিন সাগর পাড়ে
দু’টো পাহাড়ী নীল চোখ দেখেছি তোমার
তোমার নগ্ন চোখে
দেখেছি নীলাভশিখার রক্তিম বিন্যাস
তোমার টিপ পরা কপালে।
আমি জোছনার আলো দেখেছি
বিস্ময়, আমি বিপন্ন হয়ে দেখেছি
এতো সুন্দর তোমার অধর।
তোমার অধরের মৃদু ইঙ্গিতে আমি স্নান করলাম
তোমার দীঘল কেশে মুখ লুকিয়ে
নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়েছি
কত রাত-কত দিন তোমার ছন্দময় চলার গতি দেখেছি।
আমি তোমার গীর্জায় মোমবাতির আলোকোদ্ভাস দেখেছি
তোমার মলিন মুখ
তোমার বলিষ্ঠ সৌন্দর্য
তুমি আমার নীলকণ্ঠের নীল মনিহার।
সুস্মিতার চোখে
সুস্মিতার চোখে আমি দেখেছি
পরম শূন্যতা
তার চোখ ভরতো প্রায়-ই অদৃশ্য আলোকে
দৃষ্টি যেতো বহুদূর।
সুস্মিতার চোখে আমি দেখেছি
অনেক প্রহর জেগে থাকা চাঁদের আলোকে
বিমিশ্রিত রঙ সুস্মিতার চোখে, কালো নীল
চোখ তার।
সুস্মিতার চোখে আমি দেখেছি
রাত্রির হাতছানি
আমি সেই রাতের শাণিত আহবান।
এবং আমি
বড় ক্লান্ত ছিলে কাল তুমি,
তাই তোমাকে দেখার এক মুহূর্ত পর্যন্ত
অস্থির সময়টা আমাকে তাড়া করে পিছু।
তোমার শান্ত স্থির চোখে দেখেছিলাম
নীলহরিণীর দৃশ্যপট।
আমি তোমার চুল, অধর ছুঁতে ভয় পাই
দু-হাত জুড়ে তোমার প্রতি অনিন্দ্য আহবান
তোমার জোছনা ফুটিয়েছি তোমাকে দিয়ে
আমি নিশিযাপন করছি তোমাকে স্বপ্ন দ্যাখে
আমার সকল সত্তা-আমার কবিতা
তোমার পূর্ণতা অর্জন করেছি।
ভালোবাসা বনাম যুদ্ধ
আমার জীবনে প্রেম এসেছে
বার বার নদীর মতোন
স্নিগ্ধ অপলক দৃষ্টি ছিলো তাদের
মোহময়ী তাদের সেই দৃষ্টি ভেদ করে
আমার চোখ যেতো
অসীম পানে, সীমাহীন নীলাকাশে।
আমি কবিতায় প্রেয়সী করি তাদের
আমি বক্তৃতায় ভালোবাসি, তাদের
একসময় কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে পড়ি
হৃদয়ে বাজে মৃদু সাইরেন
আমার কোটর থেকে
মণি ছিটকে বেরিয়ে আসে
আমার নাকে বিষাদের গন্ধ এসে লাগে বারে বারে
এক ঝটকা বাতাস এসে আমাকে সব
ভালোবাসার আসন থেকে শূন্যে নিয়ে যায়
আমি অদৃশ্য হয়ে যাই-অদৃশ্যে।।
চিঠি
বড় অস্পষ্ট চোখে আজ তোমাকে দেখছি
মাথায় বেলি ফুলের স্নিগ্ধ আবেশ
কপালে নীল টিপ পরা, আমাকে দেখে
স্মিত হাসি হেসে আমার দিকে তাকালে প্রাসঙ্গিক নিয়মে
যদিও অসংখ্য টহলদার পুলিশের সমাবেশ, তবুও আমি আজ
বুকে সাহস পেয়েছি প্রচন্ড
আমার মধ্যে তাই এক নিরাপরাধ স্পৃহার অদম্য কৌতুহল
আমার স্বত্তার বিচ্ছিন্ন বিন্যাসে
শীতের রাতের কুয়াশা মাখা জোছনার নীমিলিত চন্দ্রের
প্রতি আলোকে তোমার মুখাবয়ব ঢেকে ফেলেছি
সুস্মিতা তুমি সুন্দর!
বড্ড সুন্দর তুমি সুস্মিতা!!
আমি তোমার লহমায় দেখার অনুমতি পাওয়ায়
আমার ভেতর জ্বালিয়ে ছিলাম সূর্যের চেয়ে তীব্রতর অগ্নি
আমার হৃদয়ে তাই জেলের ভয় নেই, তুমি ছাড়া
আমার চোখে অনন্য স্পৃহা নেই, শুধু তোমাকে ছাড়া
আমার আর অন্য কোনো পৃথক স্বত্তা নেই।
ভবিষ্যতের সুস্মিতা
ভবিষ্যতের সুস্মিতা আজ এ শতাব্দী থেকে কয়েক
শতাব্দী পিছিয়ে গেছে।
আধুনিক যুগ থেকে আবার
আদিম যুগে ফিরে গেছে, সুস্মিতা
ভবিষ্যতের সূর্য দেখা থেকে বঞ্চিত
ওর মসৃণ দেহ আবার লোমশ হয়ে উঠেছে
ওর শরীর থেকে বস্ত্র খসে গিয়ে সেখানে
দখল নিয়েছে গাছের পাতা-চামড়া
বর্বর বন্য-প্রকৃতি আবার সুস্মিতার দেহ-মনে
আদর্শের অধ্যায় আজ সুস্মিতার কাছে বিস্মৃত
ভবিষ্যতের সুস্মিতা আজ এ শতাব্দি থেকে
কয়েক শতাব্দি পিছিয়ে গেছে।
নির্বিকল্প সমাধি
আফ্রোদিতিকে সামনে রেখে আমি দাঁড়িয়ে;
ভেনাস রয়েছে পেছনেদেহকে
যে সৌন্দর্যে দিয়েছে রূপ
সেই আফ্রোদিতি এখন চুপ!
ভেনাস বলছে জোরে,
জগৎ সংসার রয়েছে ঘুমে, সৌন্দর্যের ঘোরে।’
ব্যঙ করে হেসে ওঠে আফ্রোদিতি,
সমস্ত বিশ্ব এখন রয়েছে জেগে দেহ আর দেহে।
কবি লিখে না কবিতা অচেনা’র চোখ নিয়ে!
পৃথিবী এখন মেতে উঠেছে দেহ থেকে দূরে, দেহে।’
ভনভন করে উঠে আমার মস্তিষ্ক
রক্তক্ষরণের কাল এলো ঘনিয়ে
আফ্রোদিতি হাসে বিজয়িনীর হাসি
ভেনাস ঢেকেছে মুখ লজ্জায়,অপমানে।
নিশ্চুপ অন্ধকার
শুনশান অন্ধকারও নিশ্চুপ নয়!
ছোট্টবেলার ঝিঁ ঝিঁ ফিরে এসেছে যান্ত্রিক শহরে।
আলো হয়েছে আঁধার, সুন্দরে নেমেছে অসুন্দরের মেলা!
হরিপদ বুড়ো হয়েছে হারিকেন হাতে নিয়ে
নেড়ি কুকুরটা মরেছে আজ হয়েছে বছর দশেক।
এই একখানা রাত ...
আয়নাল হয়েছিল সাওয়ারি বেশ্যা যুবতীর।
‘বাংলা’র ঢেউ ওঠেছিল মাতব্বরের টিনের গ্লাসে
কাছারির পেছনে কেঁদেছিল তার কিশোরী বউ।
এই একখানা রাত ...
পরের বউয়ের জন্য ভেঙেছিল মন নববধূর
ক্রন্দনরত কিশোরীবালা কখনও জানে নি গোপন কথা।
অন্ধকার এখনও আর নিশ্চুপ নয়!
আয়নাল বসে টেবিলের ওপাশে, এপাশে আমি
কনিয়াক হাতে, জুয়োর টেবিলে।
তবুও
ডেকেছো বলেই তো শুনিনি
কাছে এসেছো বলেই ঘেঁষিনি গায়ে গায়ে,
ধরি নি হাত।
এই হাত শুধুমাত্র কেঁপে যায় সারাদিন।
সমস্ত রঙ হয়েছে ধূসর, হলদে হয়েছে দেয়াল।
ইট পাথরের চাপে ঝাপসা যন্ত্রণাগুলো আমায় ক্লান্ত করছে।
রঙিন আলোয় চোখে ধাঁধাঁ লাগে বলেই
তুমি এসেছো তবুও,
তবুও ফাল্গুনের ঝড়ের আকাশের মত হয়েছি গম্ভীর।
তুমি কেঁদেছো তবুও,
তবুও রঙ বদলায় নি এই দুষ্ট পৃথিবীর।
কালো মেয়ের প্রতি ভালোবাসা
শাদা খাতাগুলো ভরে উঠবে একসময়
দিস্তার পর দিস্তা কবিতা লিখব
কখনো আঁকবো পেন্সিলে স্কেচ
উহু, নড়বে না তুমি।
নড়বে না তুমি কালো মেয়ে
তোমার কালো সময়ে পেলে ঠেলে এবার
আমার সামনে এলে অবশেষে।
একটা কবিতা লেখার প্রয়াস পেয়েছি তবে
পেয়েছি নতুন ছবি আঁকার মত ইচ্ছে তুলি।
কালো মেয়ের কালো চোখে ভেসে যায় কেউ
কেউ করে ভরা ভরা চোখে।
কেউ দেখে চোখের তলে অবাক বিশ্ব
আমি দেখি, আমি সড়বান করি
কালো মেয়েকে ভালোবাসি বলে।
আয়না পড়া
অসুখী সময় সকল
যখন তোমরা দুরারোগ্য ব্যাধির মত এসে
আয়ুর শীর্ষে নেমে যাও ধীরে
সকল কাব্যিক পঙক্তিমালা ইতিহাসের মলিন
ঘাম মনে হয়।
তোমরাই তো অশরীরি সেসব জীবন
যারা চোখের আবেদনকে করে ফেলে কঠিন
মার্বেলসম দৃষ্টি!
অসুখী সময় সকল,
যখন তোমরা সামনে এবং পেছন থেকে আমাকে
বেঁধে ফেলো,
আমাকে নিয়ে যাও বর্তমান থেকে দূরে
হয় অুতীত, নয় ভবিষ্যতে;
(যাদের নাগাল আমি কখনোই পাই না।)
তোমরা ভুলিয়ে দাও আমার পুড়ে যাওয়া সন্তানকে
কিঙবা যুদ্ধে, আন্দোলনে বুলেটবিদ্ধ-একান্ত শৈশব।
ঘুম ঘোরে স্বপড়ব দেখি আবার
হেঁটে এসে তরুণী মেয়ে
আমার পায়ের দিকে চেয়ে
চলে যেতে চায় নক্ষত্রের কাছাকাছি
অসুখী সময় সকল
আমায় নিয়ে খেলছ কেন কানামাছি!!
পাঁচ কাহন
এক.
মাঝে মাঝে কিছু ঘটনায় প্রভাবিত হই, এ আমার সবচে’ বড় দুর্বলতা।
এ নিয়ে আমাকে প্রায় সমস্যায় পড়তে হয়, পরিবর্তনগুলো সবাই বুঝতে পারে না।
অথচ ক্রমাগত ভুল বুঝতে থাকে, একটুও দ্বিধা করে না।
আমার পক্ষ থেকে এ নিয়ে আত্মপক্ষ সমর্থনের যৌক্তিকতা থাকে না।
দুই.
কাল রাতে ঘুমের ভেতর অনেক দুঃস্বপড়ব দেখেছি।
দিগন্তের লাল সূর্যটার
দিকে মুখ করে তুমি দাঁড়িয়ে, বাতাসে চূল আর ওড়না ওড়ায়।
এ-কী ঐন্দ্রাজালিক ভাবনা।
এখন আমার রাত কাঁটে নির্ঘুম, অথচ খানিকটা ছুটি
ছাড়া আজ আমার দিনগুলো ভালোই যাচ্ছে।
তিন.
একটু আগে সব ঝামেলা চুকে বাড়ি ফিরলাম। দরোজায় দাঁড়িয়ে পেছন
ফিরে দেখি, এ কী! আমার সমস্ত শরীর যেনো পুড়ে যাচ্ছে শারদীয়
জোছনায়, তীব্র আলোয়।
চার.
বন্ধুওয়ালা তোমাকে মনে পড়ে যায় কেবল মিছিলের মতো। তুমি সেই এক
মনে প্রাণে-দুধর্ষ সারল্যপ্রাণ তুমি। তোমার প্রতিকৃতি কল্পনা; এখনো
তোমাকে কাছে পেয়ে আনন্দে শিউরে ওঠার মতো। তুমি কি নও কোন
সন্ধ্যায় জোনাকির আলোয় উদ্ভাসিত মুখটি কিম্বা নও কোন হৃদয়বান
আত্মা। আমি বন্ধু পাবো কোথায়, আর এতো আন্তরিকত? কে আমার
নিঃসঙ্গতায় বাজাবে সেই অনবদ্য অর্গ্যান যার প্রতি সুরে মুখরিত হয়ে উঠবে
পল্লী, ভাটিয়ালি আর ভাওয়াইয়া ।
প্রেম এবং প্রেম - এক
আমি জানতাম কতটুকু পথ গেলে আমি পেতাম তোমায়
জানতে না তুমি,
কতটুকু পথ কোমল করেছিলাম আমি, কতটুকু জ্বালায়।
কতটুকু কাছে আসলে পেতাম তোমার উত্তাপ, আমি জানি।
তুমি জান না,
উত্তাপহীন প্রেম মানে জলছাড়া নদী
ঢেউ নেই, দোলা নেই-স্থির রূপোর নৌকো
পারদের মত যদি গলে যেতো তাপে, উত্তাপে
ডুবে যেতাম, মরেই যেতাম, বেঁচে যেতাম নবজঠরে।
আমি জানতাম কতটুকু জল বয়ে গেলে প’র পৌছতাম তোমায়
জানতে না তুমি
কতটুকু পথ কেটেছি, ডুবসাঁতার আমি, কতটুকু জ্বালায়।
একটি জানালা দৃশ্য নিয়ে
প্রতিদিন অবহেলায় চলে যাও একা।
জানালাঘেরা প্রতিটি বিকেল হয় নিষ্ফল!
সারাদিন ভর শুকনো কাপড়গুলো খুলে নাও
ধাতব তার থেকে, সযতনে।
এই একটিমাত্র দৃশ্য ...
বছরের পর বছর ঘুরে, আমার জানালায় ধরা দেয়।
প্রতিটি বিকেল কাপড় কুড়োনো
প্রতিটি সন্ধ্যায় মনে ভর করে একরাশ হাহাকার!
তুমি জানলে না নারী,
কোনো কথা উচ্চারণ না করেও কত কথা ছড়িয়ে দিচ্ছি
তোমার ছাদে, পড়ে নাও।
শুকনো কাপড়ের ভাঁজে তুমি খুঁজো দ্যাখো তাদের।
তোমার নিত্যদিনের অবহেলা
আমার ভেতর থেকে বের করে নিয়েছে বিদ্রোহ সব
রেখে গ্যাছো প্রেম আর হাহাকার!
বিকেলের সোনারোদ আলো খেলাতেই আঁধার।
তুমি জানলে না নারী
প্রতিদিন বোকা চেয়ে চোখে কতটুকু গভীরতা
কতটুকু অতলে তলিয়ে যাবার আহবান
অতলযাত্রী নারী তুমি হবে না কোনোদিন!
ইদানিং
ইদানিং মাঝরাতে ঘুম থেকে জেগে উঠি
কপালে ফেটে বিন্দু বিন্দু ঘাম
জমে থাকে সব ক্ষেদ অবিরাম
ঘুরপাক খায় মনে।
মনে তখন প্রশ্ন জাগে, জাগে বিস্ময়
এ এক জীবনে কেন এতো ভয়
যদিও যতোটা ভাবি ঠিক ততটা নয়।
ইদানিং ছায়া হতে ইচ্ছে করে খুব
ইচ্ছে করে প্রেতাত্মা হয়ে সবার ঠুঁটি ধরি চেপে
চারিদিক নড়ে উঠুক, উষ্ণ ঠোঁট জোড়াও উঠুক কেঁপে
রক্তিম আবেশে।
ছায়া হয়ে, প্রেতাত্মা হয়ে বার বার
আসি যেনো ফিরে আবার
কারও আঁচল ধরে, কিংবা নাড়িয়ে কানের দুল
সবকিছু ভুলে যাক সবাই নির্ভুল
ইদানিং হঠাৎ করে।
বসন্ত আসবে বলে
কাঁচের দেয়ালে যে ছবিগুলো টাঙিয়েছিলাম
টাঙিয়েছিলাম কোনো এক পৌষের রাতে;
আসছে বসন্তে প্রাণ পাবে ভেবেছিলাম ছবিগুলো।
আবার হেসে উঠবো আমার দগ্ধপোষ্য অনুজ
বালিশচাপা পড়ে যে মরে গিয়েছিলো ছোট্টকালে।
ভেবেছিলাম কোদাল দাঁত নিয়ে লজ্জায় পড়বে মিন্টুটা
আহা! বেচারা, পেটের ব্যথাটা তাকে নিয়ে গ্যালো লজ্জা থেকে দূরে।
কাঁচের দেয়ালে এখন নিজের ছায়াই দ্যাখি,
কেননা, যে বসন্ত আসবে বলে আমায় আশ্বাস দিয়েছিলো
যে পালিয়েছে আমার দৃষ্টির আড়ালে।
দেয়ালে ভিতর ছবি সব প্রাণের আশায় বিহ্বল তাকিয়ে
নিজের প্রতিবিম্বে দেখি লক্ষ প্রাণের ছায়া।
বসন্ত আসবে বলে দাঁড়িয়েছি আজ
আত্মাদের মাঝে।
তোমাকে না পেয়ে . . . আমার চোখ!
যে কথা জানো না তুমি,
তা জানাবো তোমায় আজ।
তোমার জন্যে আজ একটি শালিখের মন খারাপ,
তোমার জন্যে ভিজে গ্যাছে কবিতার খাতা চোখের জলে,
তোমার জন্যে রক্তিম আকাশ কেঁদেছিলো ফুঁপিয়ে।
যে শব্দ তুমি শুনো নি কখনও
শুনতেই হবে আজ।
কান পেতে দেখো শুনে রমনী
বাতাসে বাতাসে মরমর শব্দ
হো হো হাসি দমকে ঐ তরুনের
কিশোরীর বালিশ চাপা কান্না ।
যে দৃশ্য তুমি দেখনি নারী,
দেখবে তুমি আজ।
কচুরীপানা ভরা চাঁদ-দুধের মিশ্রণ.
সিগারেটের শেষপ্রান্তে নাল-নীল ধোঁয়া
তোমাকে না পেয়ে ... আমার চোখ!
মুঠো আলাপের মুঠো প্রেম
বেশি নয়, এতোটুকুই।
সুগভীর সমুদ্র শুকনো হলো এতোটুকুই
জমাট ব্যথা উবে গেলো তার একথাতেই
জীবনের প্রতি আজ বড্ডো বেশি মায়া!
কিনড়বর কন্ঠ নয়, কর্কশ কণ্ঠে ডেকেছিলো সে, আসলে
ওপাশ থেকে ডাকলো, আমি শুনলাম
তারপর কিছুক্ষণ চোখ বুঁজে রইলাম
কর্কশধ্বনি জলতরঙ্গের মতো বাজলো কিছুক্ষণ।
বেশি কিছু নয়, এ আমার মুঠোআলাপের প্রেম
এ আমার চোখের সামনে না দেখা পরীর গল্প
কর্কশ গলায় রমনী মোহনীয় হয়ে
মোহনবাঁশী বাজায় কানে,
আমার মন ছুঁটে যায় আকাশপানে
বিষন্ন সুরে বাজে বিউগলের মতো,
‘ভালো তো ? ভালো তো ? ভালো তো?’
ধ্বনি, প্রতিধ্বনি দিগ্বিধিক ছড়িয়ে ...
এই একই গল্প ফিরে আসে বারে বারে ...
বিছানায় এলে-বেলে শুয়ে থাকা নারী
সন্ধ্যেতারার মধ্যে কিছুক্ষণের জন্যে ঝলকে ওঠা শরীর
তারপর ...?
অশরীরী হয়ে ওঠা পশুর মৃত্যু, নিস্তেজ আহাজারি।
পুরুষের পৌরুষ এইখানেই, এইখানেই নারীর কুমারীত্ব অবসান
বাহুর মাঝে লুকানো মুখ, বুকের খাঁজে পুরুষের খোঁজ
এ এক অন্ধকারে ভালোবাসার গন্ধ!
নারী হয় তার প্রোথিত ধনের অন্ধকার
এই একই গল্প ফিরে আসে বারে বারে . . .
অধরা স্বপেড়বর আরেকটি বীজ বোনা হয়
নারীর শরীরে
এক এক স্বপড়বভাঙা গান
ক্ষত-বিক্ষত দ্রোহে।
এই একই গল্প ফিরে আসে বারে বারে ...
Post Comment
Post a Comment